মুক্তির অপেক্ষায়
-জাকির
আবদার
বেতের
চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে সায়েম সাহেব ঝিমাচ্ছেন।রহিমা বেগম রান্না করছেন।কাজের মেয়ে
নিরু ফেইসবুকে তার এক বিদেশী বন্ধুর সাথে চ্যাঁট করছে।সামনের দরজা খোলা।
পাশের
বাসার মালী ছকড়াটা বারবার এই বাসার দিকে উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে।বেলিকনীতে ঝুলিয়ে রাখা লোহার খাঁচায়
একটি শালিক।ময়না পাখির মত দেখতে।পাখিটি মুক্তির অপেক্ষায় ছটফট করছে।সে দিকে অবশ্য
কারো কোন খেয়াল নেই।মৌমিতা সর্বদা খোজ-খবর রাখত।কিন্তু মৌমিতা বাড়িতে নেই।
রিংটোন
এর আওয়াজ কানে আসতেই সায়েম সাহেব লাফিয়ে উঠলেন।নিরুর স্বামী কল করেছে।গ্রাম থেকে
শহরে আসতে চায়।নিরুর সাথে থাকতে চায় সে।
সায়েম
সাহেব এতক্ষনে রেগে গীয়ে তোতলাচ্ছেন।খুব বেশি রেগে গেলে তিনি এমন তোতলান।নিরু
বিষয়টা বুঝতে পারল।তাই সে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি বেঁয়ে ছাঁদে চলে গেল।
এতক্ষণ
পাঞ্জাবীর পকেটে রাখা ফোন বেজে যাচ্ছে খেয়াল করেননি সায়েম সাহেব।একবার রিংটোন
বেজে শেষ হয়ে যখন পুনরায় বাজতে শুরু করল,তখন তিনি টের পেলেন।
রিসিভ
করার পর জালালের কন্ঠ শুনে,কিছু সময় তিনি কোন কথা বলতে পারলেন না।এরপর যা বলতে
লাগলেন;জালাল বাধ্য হয়ে অভদ্রের মত ফোন রেখে দিল।
শুয়োরের বাচ্চা,মুখ
জুতিয়ে ছিড়ে দেব তোমার।আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছো,আবার আমাকেই ফোন করে বলছো;কেমন
আছেন?স্বামীর উচ্চ স্বর শুনে
রহিমা
বেগম রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন।তার এক হাতে ওড়ং। আর অন্য হাত শাড়ির আচল কোমরে
গোজার কাজে ব্যাস্ত।
মনে
হচ্ছে তিনি তুমুল ঝগড়ার প্রস্তুতি
নিচ্ছেন।কিন্তু
না।তিনি শান্ত স্বরেই বললেন,এমন করে বলছো যেন তোমার মেয়েকে ও জোর করে তুলে নিয়ে
গেছে।হ্যাঁ তাই,শালার পত্রিকা ওয়ালার বাচ্চা
আমার
সহজ-সরল মেয়েটাকে ফুসলিয়ে-ফাসলিয়ে শর্বনাশ করার জন্যে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে
গেছে।আমি ছাড়ব না ওকে।পুলিশে দেব।তারপর ব্যাটা
বুঝবে
যে,ঘর জামায় হয়ে শাশুড়ির হাতে কোরমা-পোলাউ খাওয়া ভাল; নাকি জেলখানার মশার কামড়
খাওয়া ভাল।রহিমা বেগম বললেন,তোমার মেয়েকে
জালাল
ভাগিয়ে নিয়ে যায়নি,বরং তোমার মেয়ে ওঁকে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে।
কারন,জালাল
ঘর জামায় থাকতে রাজী হলেও,তোমার মেয়ে বাপের
বাড়ি থাকতে নারায।তার
মতে;বিয়ের পর কোন মেয়ের বাপের বাড়ি থাকা উচিৎ নয়।
আর জালালের বাবাকে পত্রিকা ওয়ালা বলে খোটা দিচ্ছ কেন?উনি যে পত্রিকা বিক্রয়
করেন-
তা
উনার নিজের সম্পাদনায় বের হয়; প্রতি তিনমাস
পরপর।তার
নিজের একটা কলাম থাকে প্রতি সংখ্যায়।কি সুন্দর লেখার হাত,কি চমৎকার
ভাবনা!’ভরসার মেঘ’ নামে ওই কলামটি আমি মাঝে মাঝে পড়ি।
বিশেষ
করে আমার যখন মন খারাপ থাকে,তখন ‘ভরসার মেঘ’এক নিমিশেই আমার মন ভাল করে দেয়।
দুপুর
গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।মৌমিতা একাএকা শুয়ে আছে।জালাল শশুরের সাথে ফোনালাপের পর
কোন কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।এখনো ফেরার নাম নেয়।
বাড়িতে
আর কোন লোকজন না থাকায়;একটু ভয় ভয় লাগছে মৌমিতার।
লোকজন
না থাকার কারন হল-এই বাড়িতে এক সময় খুব ভুত-পেতের উপদ্রব ছিল।তাই বাড়ীর সবেক মালিক
খুব্ কম টাকার বিনিময়ে বাড়িটি বিক্রি করে দেন।
বাড়ীটি
নির্মান করেছিলেন নির্মল নামের এক হিন্দু ব্যাক্তি।তার রহস্যজনক মিত্যুর পর
উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়ীর মালিক হয় তার ছেলে মিতুল।
এরপর
বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটতে থাকে।সবার ধারণা নির্মল বাবু মরে গীয়ে
ভূত হয়ে গেছে।তার দ্বারা এই সব কান্ড ঘটছে।
সর্বশেষ যে
কারনে বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হয় মিতুল-
মিতুলের
স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসে।কিন্তু এগার মাস অতিবাহিত হয়ে যাবার পরেও সন্তান
ডেলিভারি না হওয়ায়,তাকে ভারত নিয়ে যাওয়া হয়।
ডাক্তারগণ
দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর আবিস্কার করেন যে,মিতুলের স্ত্রীর গর্ভে কোন সন্তানই নেয়।তবে
কি আছে,তা নির্নয় করতে অপারেশন করা লাগবে।
সবাই
খুব ভয় পেয়ে যায়।কারন; তৎকালীন সময়ে অপারেশন কথাটি একটি সর্বজন ভীতির কারন ছিল।মিতুলের
স্ত্রী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে।তার ধারণা;তার গর্ভে অবস্যই সন্তান আছে।
এবং
অপারেশন ছাড়ায় তার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে।কিন্তু কেউ তার কথার মূল্য দিল না।শেষমেশ
অপারেশন করা হল।
চিকিৎসার সমস্ত
ব্যায়
হাসপাতাল কতৃপক্ষ বহন করে।কৌতুহল বিরাজ করছিল সবার মাঝে।গর্ভে এমন কি থাকতে
পারে;যা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও ধরা পড়ছে না।
বাইরে
মিতুল ও তার শশুর বাড়ির লোকজন একটি কাঠের বেঞ্চে বসে আছে।তাদের পাশে
হাঁসপাতালের অন্যান্য লোকজনের ভীড় জমে আছে।
সবাই
খুব আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে।উৎসুক লোকেদের মধ্যে থেকে একজন মোটাসোটা লোক এসে
মিতুলকে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
লোকটার
কথা এমন ছিল-আপ ফিকার মাত কি জীয়ে,কুচ নেহি হোগা,ভগয়ানকো বোলাও,উননে সবকো ভালা
করেগা।
মিতুল
বিরক্ত হয়ে বলল-আপ প্লিজ ইহাছে যাইয়ে
Sign up here with your email
ConversionConversion EmoticonEmoticon