মৃত ব্যাক্তির ব্যবহারের জামা কাপড়,কাথা বালিশ,খাট পালঙ্ক সব কিছুই শ্মশান ঘাটে ফেলে দেওয়ার রিতি ছিল।সেই সময়ের একটি ঘটনাঃ
নিতাই কুন্ডু বেশ সুনামধন্য ব্যাক্তি।স্থানীয় এক হাটের মহাজন তিনি।সুনামের পাশাপাশি ঢের অর্থও কামিয়েছেন ব্যাবসা-বানিজ্য করে।এক রাতে হাট থেকে এসে খাওয়া-দাওয়ার পর ঘুমুতে যাবেন এমন সময় বুকের ব্যাথাটা জেগে উঠল।
দুই ছেলে আর স্ত্রী ধরাধরি করে বিছানায় শুয়ে দিল তাকে।কিন্তু খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নিতাই বাবু ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন।হিন্দু সম্প্রদায়ের রিতি অনুযায়ী লাশ শশ্মান ঘাটে নিয়ে গিয়ে চিতার আগুনে পুড়িয়ে ছায় করা হল।ফেলে দেওয়া হল তার ব্যবহারের জামা-কাপড়,কাথা,বালিস এমনকি তার সখের পালংক।নিতাই বাবুর দুই সন্তান ও স্ত্রী জানতেন যে বালিশের মধ্যে টাকা-পয়সা আছে কিন্তু মিত্যুর সময় যে ঐ বালিশে মাথা রেখে মারা গেছেন নিতাই বাবু।অতএব সমাজ,ধর্মমতে ঐ টাকা-পয়সার দাবি ছেঁড়ে দিতেই হবে।নচেৎ মৃত ব্যাক্তি স্বর্গে স্থান পাবে না।
অম্যাবস্যার রাতের ঘুটঘূটে অন্ধকারে শ্মশান ঘাট এক ভয়ানক রুপ ধারন করে।ঝুমঝুম নুপুরের আওয়াজ পাওয়া যায়।শুনেছি এই রাতে মৃতের আত্নারা নৃত্য করে।দুখচান ভয় করেন না।সে একজন কবিরাজ।শিরক করে জীন-ভূত বশ করে ।তারপর ঝাড়ফুক দিয়ে মানুষের রোগ বালাই দূর করে দেই।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মহব্বত সৃষ্টি করে দেই।জীন-পরীর আছর থেকে রক্ষা করে।এ সব করে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন হয়।যা খরচা করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন রকম চলে আর কি।
নিতাই বাবুর মিত্যুর ঠিক একদিন পর দুখচান স্বপ্নে দেখলেন যে,বুক ভরা বাঁওড়ের পশ্চিম পাশের শ্মশান ঘাটে একটি বালিশ পড়ে আছে যা কুড়িয়ে নিয়ে আসলে তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে।
ঘুম থেকে জেগে উঠেই তিনি ঘরের বাইরে এসে অনুমান করলেন যে,রাত শেষ হোতে আর বেশি সময় নেই।তাড়াহুড়া করে বাঁওড়ের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলেন ।পতিমধ্যে দেখা হয়ে গেল তার এক চাচার সাথে।চাচা জিজ্ঞেস করলেন এত রাতে কোথায় যায় সে?দুখচান তাকে বিশ্বাস করে সব খুলে বললেন।চাচাও তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে সু পরামর্শ দিলেন।বললেন যে,এখন গেলে তোকে জীন-ভুতে মেরে বাঁওড়ের গাদে পুতে ফেলবে।সকালে গিয়ে নিয়ে আসিস।দুখচান বললেন,কিন্তু অন্য কেউ যদি নিয়ে যায়?আরে বোকা স্বপ্নে তোকে দেখিয়েছে না?আর কেউ ছুতেই পারবেনা ওটা।দুখচান ভাবলেন যে,মুরব্বি মানুষের কথা না শুনলে অমঙ্গল হয়।তাই তিনি ফিরে গেলেন বাড়িতে।কিন্তু সেই রাতে আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারলেন না দুখচান।
সকাল হোতেই দুখচান বাঁওড়ে চলে গেলেন।বালিশ নিয়ে খুব দ্রুত বাড়ি চলে আসলেন।স্ত্রীকে ডাক দিয়ে বললেন,ঘরের দরজাটা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে একটা বাতি জ্বালিয়ে দিতে।খুশিতে আত্নহারা হয়ে সে বলতে লাগলেন,আর আমাদের অভাব থাকবে না।দুখচান এবার সুখচান হয়ে যাবে।বলতে বলতে এক টানে বালিশটা ছিড়ে ফেললেন।বালিশের ভিতর থেকে বের হল যা তা দেখে দুখচান নির্বাক হয়ে গেলেন।দীর্ঘক্ষন চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেঁড়ে বলে উঠলেন;মতলব চাচা আমাকে ঠকিয়েছে।স্ত্রী তার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না।ভাবছে তার স্বামী বোধহয় পাগল হয়ে গেছে।দুখচান এক দৌড়ে মতলব চাচার বাড়িতে চলে গেলেন।মতলব চাচা তার নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন তখনো।
অনেক ডাকাডাকির পর ঘুম থেকে উঠে বললেন,কিরে দুখচান তুই পাগল হয়ে গেছিস নাকি?মাঝরাতে একবার বাঁওড়ে যাচ্ছিলি মরতে।আমি না ফেরালে এতক্ষণ তোর জানাজা করতে হোতো ।আর কিছু বলার সুযোগ থাকল না দুখচানের।ফিরে এসে শুধু প্রলাপ বকতে লাগলেন।শেষমেশ পাগলই হয়ে গেলেন দুখচান।এদিকে মতলব চাচা ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’।
Sign up here with your email
1 comments:
Write commentsশুভেচ্ছা ।প্রিয় সাহিত্য অনুরাগী বন্ধু,আআপনার জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।যদি আমার এই ছোট গল্প পড়ে আপনার এতটুকু ভাল লাগে।তবেই আমার পরিশ্রম,আমার সাধনা সার্থক।
ReplyConversionConversion EmoticonEmoticon